1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : রাকিবুল হাসান শান্ত : রাকিবুল হাসান শান্ত
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

বার্লিনের পথে-প্রান্তরে (২)

  • Update Time : রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০
  • ৩৯৮ Time View

প্রত্যয় প্রবাস ডেস্ক:পুরো ইউরোপেই খাবারের দাম খুব বেশি না। তুলনা করলে আমাদের ঢাকাতেই দাম অনেক বেশি। বার্লিনেও খাবার বেশ সস্তা।রিসাতে টা চিকেন উইংসের দাম মাত্র . ইউরো মানে ২৫০ টাকা। চিকেন উইংস, তান্দুরি চিকেন এবং আরবি রুটি নিয়েবসলাম খেতে। পেটে ক্ষুধা ছিল, খাবারও পর্যাপ্ত। চিকেন উইংস দেখেই মন ভরে গেল আর স্বাদে আমাদের দেশের Bfc এর সাথেএকদম চোখে চোখ রেখে পাল্লা দিতে পারবে। খেয়ে পেট এবং মন দুইটাই ভরে গেল। আহ!! ফাবি আইয়ে আয়ালা রব্বিকুমাতুকাযিব্বান!!

এখন এক কাপ তুর্কি চা হলে ব্যাপারটা একেবারে নান্নার বিরিয়ানির পরে এক গ্লাস বোরহানির মত হয়ে যেত। কিন্তু এই তুর্কিজাতিটা এই ক্ষেত্রে মারাত্মক জাতীয়তাবাদী, তুর্কি ক্রেতাদের ফ্রী চা দেবে কিন্তু অতুর্কিদের? অনেক কাহিনী বলে নিয়ে হয়। এখানেসমস্যা হচ্ছে মুলামুলি করার  মত জার্মান আমি পারি না। একটা ফ্রী পরামর্শ, যদি কখনো কোন তুর্কি দোকানে যান তাহলে সাথেএকটা তার্কিশ বন্ধু নিয়ে যাবেন, তাহলে দেখবেন দুনিয়াটা কত সহজ!

খাওয়া শেষে হাটতে বের হলাম। আমি এখন আছি বার্লিনের অন্যতম প্রানকেন্দ্র সিকান্দার প্লাটজে, সংক্ষেপে আলেক্স।জায়গাটা বেশ উন্মুক্ত, এক পাশে আছে বার্লিন টেলিভিশন টাওয়ার (জার্মামির প্রতিটি শহরেরই এই টাওয়ার আছে) অন্যপাশেএকটা কম্পাসের মত বস্তু যাতে কোন শহর কোন টাইম লাইনে আছে তা উল্লেখ রয়েছে। গ্রিনিচ+ দেখতে পেলাম ঢাকার নাম!! আহ, মনটাই ভাল হয়ে গেল!

আলেক্সের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বেশুমার কফির দোকান। দোকানের সমানে সারি সারি চেয়ার পাতা। এক উস্তাদবলেছিলেন, ওলামাদের পানীয় হচ্ছে চা আর আউলিয়াদের পানীয় হল কফি। তো আমি যেহেতু আউলিয়া পর্যায়ে চলে গেছিতাই দুই ইউরো দিয়ে এক পেয়ালা কফি নিয়ে বসলাম। শেষ বসন্তের রোদ গায়ে পড়লো, সাথে আয়েশ করে কফি আহ, আমারোইকবালের মত বলতে ইচ্ছা হল,

জিন্দেগী য়ুই ভি
গুজুর হী জাতী!!

কফি খেতে খেতে দেখছিলাম বার্লিনের জীবন।  নানান রংয়ের নানান ধরনের মানুষ বাস করে এই শহরে। বার্লিন একটাবহুজাতিক শহর৷ কালো আফ্রিকান থেকে শুরু করে স্বর্ণকেশী; নীল চোখের শেতাঙ্গ, আরব কিংবা পীত বর্ণ সবাইকে দেখতেপাবেন। ১৮৫ টা দেশের মানুষ বাস করে এই শহরে। এই জনস্রোত দেখতে আমার বেশ লাগে। কেউ যাচ্ছে উবান ধরতে, কেউযাচ্ছে কাজে, কেউ স্কুল থেকে ফিরছে, কারো গন্তব্য হয়তো ক্লাব। আর আছে আমার মত পদব্রাজক। বার্লিন ইউরোপের অন্যতমপ্রধাম ভ্রমন গন্তব্য। প্রতি বছর ৬০ লক্ষেরও বেশি মানুষ বার্লিন ঘুরতে আসে।

কফি শেষ করে হাটতে হাটতে গেলাম আলেক্সের অন্যপাশে। এই পাশে টেলিভিশন টাওয়ার, রাতহাউস(প্রাদেশিক সরকারেরপ্রধান কার্যালয়) টেলিভিশন টাওয়ারের নিচেই একটা বিশাল পানির ফোয়ারা এবং বসার জন্য ব্রেঞ্চ। অন্য পাশে রাতহাউসেরসামনে বসার জন্য অসংখ্য ব্রেঞ্চ, সুন্দর একটা বিশাল ফোয়ারা এবং একটা গির্জা। একটা ব্রেঞ্চে দেখলাম এক বৃদ্ধ শুয়ে ঘুমাচ্ছে।চোখেমুখে দারিদ্র্যতার ছাপ স্পর্ট; আফ্রিকা, বাংলাদেশ বা ইউরোপের এই পাঁচ তারকা রাজধানী, দ্রারিদ্র‍্যতার ভাষা সবজায়গাতেই এক। আবার কিছুক্ষণ বসলাম। আলসেমির আনন্দ অমৃতসম!

এরপর ঢুকলাম গির্জার মধ্যে। এই গির্জার নাম সেন্ট মেরি গির্জা৷ ১২শ শতাব্দীর দিকে এটি ক্যাথলিক গির্জা হিসেবে নির্মিত হয়।জার্মানিতে মার্টিন লুথারের বিপ্লবের পরে প্রোটেস্টেন্টরা এটা দখল করে প্রোটেস্টেন্ট গির্জায় রুপান্তরিত করে। জার্মানির অধিকাংশগির্জার ভাগ্যেই ঘটনা ঘটেছে। এটা এমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু না। তবে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র হল, ইহুদিদের জুদাইয়া এনসাক্লোপিডিয়াতেউল্লেখ আছে ঠিক এই জায়গাতে ১২৪৩ সালে মিথ্যা অভিযোগ এনে Host Desecration এর অংশ হিসেবে অনেক ইহুদিকেপুড়িয়ে মারা হয়। ভেতরে ঢুকলাম, ভবনটা একদম নতুন। মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিলো যে এটা প্রায় ৮০০ বছরের পুরানো!! প্রোটেস্টেন্টরা ভাস্কর্য বা মূর্তি বানায় না। তাই ভেতরেও কিছু নেই। দুইদুইটা মহাযুদ্ধ গেছে এরপরেও কিভাবে এই ভবন দাঁড়িয়েআছে এই প্রশ্ন মাথায় আসতেই পারে। উত্তর হল দুই পক্ষই খৃষ্টান। আরো নির্দিষ্ট করে বললে আমেরিকা এবং ইংল্যান্ড উভয়ইজার্মানদের মত প্রটেস্ট্যান্ট। তাই গির্জা তারা স্পর্শ করেনি। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে আক্ষরিক ভাবেই পুরো হ্যানোভার শহরই ছাতু হয়েযায় তবে শহরের মূল গির্জার কিছুই হয়নি। ক্যাথলিক ফ্রান্স এবং কমিউনিস্ট রাশিয়া ঢোকার পরে অবশ্য ঘটনা পাল্টে যায়। কিছুকিছু গির্জাতেও বোমা ফেলেছে তবে সেটাও সংখ্যায় অনেক বেশি না।

সেন্ট মেরি থেকে বের হয়ে রওনা দিলাম তেমন একটা গির্জায় যেটাতে বোমা পরেছিলো, কাইজার ভিলহেলেম স্মৃতি গির্জা। এইগির্জা সেন্ট মেরির ঠিক বিপোরীত। এটা নির্মান কাল উনবিংশ শতাব্দী কিন্তু দেখলে মনে হয় অনেক পুরানো। আর দ্বিতীয়মহাযুদ্ধে সোভিয়েত বাহিনী বোমা ফেলে গির্জা একদম ধ্বংস করে ফেলে। ১৮৯১ সালে ২য় কাইজার ভিলহেলেম এবং উনার স্ত্রীঅগস্থা ভিক্টোরিয়া এই গির্জা নির্মান করেছিলেন। জার্মানির সোসালিষ্ট এবং শ্রমিক আন্দোলনের বিপোরীতে ধর্মীয় সামাজিকজীবন ফিরিয়ে আনার জন্য এই গির্জা নির্মান করেন (সোভিয়েত বোমা কি এই কারনেই পরেছে!?)

গির্জাটা পুরোপুরি ধ্বংস হলেও ডমটা কিছুটা অক্ষত আছে। ইতিহাস প্রেমী জর্মানরা এই ডমকে জাদুঘরে রুপান্তরিত করেছে। খুবইঅল্প জায়গা একসাথে বেশি দর্শনার্থীকে ঢুকতে দেয় না। লাইনে দাঁড়লাম। আমার সামনে কয়েকজন জার্মান দাঁড়িয়েছে। পুরোপরিবারসহ এসেছে তারা। ইউরোপে ধর্মের রসায়নটা বোঝা একটু মুসকিল। তারা ধার্মিক না কিন্তু প্রতিটি শহরের গির্জারছড়াছড়ি এবং গির্জার জৌলুশ দেখে তাদের অর্থনৈতিক শক্তি সম্পর্কে একটা ধারনা পাবেন। আর একটা বিষয় সুনিশ্চিত, এরাজিসাস ক্রাইস্ট আঃ কে অসম্ভব ভালবাসে। জিসাস ক্রাইস্ট আঃ এর প্রতি ভালবাসাটা সম্ভবত প্রোটেস্টেন্টদের একটা প্রধানবৈশিষ্ট্য। কয়েক মিনিট লাইনে দাঁড়িয়ে ভেতরে প্রবেশের সুযোগ পেলাম৷ দেয়ালে কিছু ছবি। একপাশে একটা ক্রুস ঝুলানোজিসাসের মূর্তি মাঝখানে ছোট্ট একটু জায়গাতে বিক্রির জন্য সুভেনি। ছবি দেখতে গিয়ে একটা দারুন জিনিশ দেখলাম।

স্ট্যালিনগ্রাদ ম্যাডোনা! এটি ভার্জিন মেরীর একটা ছবি। জার্মান বাহীনি এবং সোভিয়েত মধ্যে ১৯৪২ সালে স্ট্যালিনগ্রাদ যুদ্ধেরঠিক আগে জার্মান বাহিনীর চিকিৎসক এবং ধর্মতত্ত্ববিদ . কার্ট রেউবার সোভিয়েত ইউনিয়নের মানচিত্রের বিপোরীত পাশে এইচিত্রটি আঁকেন। জার্মান বাহিনীকে চারদিক থেকে সোভিয়েত বাহিনী ঘিরে ফেলেছে। পরাজয় নিশ্চিত। মরিয়া জার্মান বাহিনীযুদ্ধে যাবার আগে এই ছবির সামনে শেষ প্রার্থনা করে। যুদ্ধে সোভিয়েত বাহিনী জয় লাভ করে তবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। তারপরএই চিত্রকর্ম সহ . কার্ট রেউবার গ্রেফতার হোন। সোভিয়েত বন্দী শিবিরেই . রেউবার মৃত্যু হয়। . রেউবারের বেশ কিছু জিনিশপরিবার ফেরত পায় তার মধ্যে এই ছবিটিও ছিল। জার্মানরা এই ছবি সোভিয়েতদের ধ্বংস করা গির্জাতেই রেখেছে!! ব্যাপারটারএকটা ভাল রাজনৈতিক তাৎপর্য আছে বটে!

জাদুঘরটা ঘুরে দেখলাম কিছুক্ষণ। বের হলেই সামনে আরেকটা গির্জা। এই গির্জা বানানো হয়েছে কাইজার ভিলহেলেম স্মৃতিগির্জার ধ্বংস হয়ে যার মারবেল পাথর দিয়ে। তাই অনেকটা আয়তক্ষেত্রের মত স্থাপনা। ভেতরে না ঢোকা পর্যন্ত এটা যে গির্জা তাবোঝার উপায় নেই। রিতীকে অতিক্রম না করে ভেতরেটা সাদামাটা। শুধু সামনে ক্রুশে ঝোলানো জিসাস ক্রাইস্ট, প্রটেস্ট্যান্টগির্জাগুলো যেমন হয়।

ভিলহেলেম স্মৃতি গির্জার বিপোরীতে পাশের এলাকার নাম বিকিনি বার্লিন। উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে গড়ে উঠা এইএলাকাটা শিক্ষা, ব্যবসা, বিনোদন সবদিকে বেশ সমৃদ্ধ একটা উপশহরে পরিণত হয় খুবই অল্প সময়ের মধ্যেই।  প্রথম বিশ্বযুদ্ধেরধাক্কা সামলাতে পারলেও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সামনে আর দাঁড়াতে পারেনি। রাস্তার পাশেই একটা বিলবোর্ডে এলাকার ধ্বংসযজ্ঞেরইতিহাস লেখা আর সাথে সেই ছবি। ছবিগুলো দেখতে দেখতে কিছুটা আনমনা হয়ে গেলাম। যুদ্ধ যে কতটা ভয়াবহ হতে পারেসেটা সম্ভবত এই জার্মানদের চেয়ে বেশি আর কেউ জানে না। প্রথম এবং দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের তান্ডব দেখার পরেও মানুষের হুশহয়নি।

তারপরও দেশগুলো বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করছে সামরিক শক্তির উপর। কয়েকশ বার পৃথিবীকে গুরো করে ফেলার মতঅস্ত এখন আছে মনুষ্য সমাজের কাছে। অর্ধ শতাব্দী চুপ থাকার পরে জার্মান সরকারও ঘোষণা দিয়েছে ইতিহাসের দায় থেকেইজার্মানিকে সামরিক খাতে শক্তিশালী হতে হবে। ভারতপাকিস্তান, ভারতচীন, তুরস্কগ্রীস, লেবাননের সীমান্তে একটা চাপাউত্তেজনা। বিশ্ব অপেক্ষা করছে তৃতীয় মহাযুদ্ধ শুরুর বোতাম টেপার শব্দ শোনার জন্য। আইনস্টাইন বলেছিলো কোন অস্ত্র দিয়েতৃতীয় মহাযুদ্ধ হবে আমি তা জানি না তবে চতুর্থ মহাযুদ্ধ হবে লাঠি এবং পাথর দিয়ে। মানে আমরা কিছুদিন পরে হয়তোহিরোশিমা আর নাগাসাকিকে ভুলে যাবো। আহারে কোথায় হারিয়ে গেল সেই দশটি কড়ি….

এরপর উদ্দেশ্য বিহীন ভাবে হাটাহাটি। পথ হারাবো বলেই এবার পথে নেমেছি! ইউরোপে যেটা সবচেয়ে বেশি মিস করি হল রাস্তারপাশের খাবারগুলো ইংরেজিতে যাকে বলে street food এখন যদি ইখতিয়ার উদ্দিন মামার এক ঠোঙ্গা ঝাল মুড়ি পাওয়া যেতো!! তাহলে উত্তম কুমারের মত গাওয়া যেত, এই পথ যদি না শেষ হয়!

বার্লিনের রাস্তায় আরো একটা দারুণ জিনিশ পাবেন, বৈদ্যুতিক ফুট বাইক। প্রতি মিনিট ১৫ সেন্ট। একটা এপস নামাতে হবে, কোড স্কান করলেই গাড়ি চালু। এমন ফাঁকা রাস্তায় আমার সামনে ফুট বাইক মানে একজন ক্ষুধার্থ ভেজিটেরিয়ানের সামনেদোসা, আভোকাডো আর সিজার সালাদ একসাথে দেওয়া। এপস নামিয়েই চরে বসলাম। দাঁড়িয়ে থাকবেন আর গাড়ি ২০কিলোমিটার গতিতে চলবে! আহ! মানুষের জীবনকে সহজ করেছে যে বিজ্ঞান তার প্রতি সশ্রদ্ধ ভালবাসা!

ঘন্টা খানিক চালিয়ে আবার সৃষ্টিকর্তা পদত্ত পদযুগলের উপর চরে বসলাম। পাশেই একটা সুভিনিয়র দোকান। পতাকা, ম্যাপ, মগ, চাবির রিং সহ নানান জিনিসপত্র। করিতকর্মা জার্মানরা আরো একটা জিনিশ রেখেছে, বার্লিন দেয়ালের ধ্বংসাবশেষের  টুকরো। মাত্র কয়েক ইউরো খরচ করলেই আপনি ঐতিহাসিক দেয়ালের একটা অংশের মালিক হয়ে যাবেন!! আমাদের দেশে হলেবলতোজাপানি বুদ্ধি“…

আরেকটি জিনিশ দেখে কিছুটা স্মৃতি কাতর হয়ে গেলাম,ভিউ কার্ড। বার্লিন গেট, বার্লিন ওয়াল, পূর্ব বার্লিন গ্যালারি, রাইখস্ট্যাগ, টিভি টাওয়ার ইত্যাদির ছবির ভিউ কার্ড। ছোট বেলায় এই সব কার্ডের গুরুত্ব আমাদের কাছে হলি গ্রেইলের চেয়েকোন অংশে কম ছিল না। মনে আছে কত খুশি হতাম একটা কার্ড পেলে, জমাতাম, মাঝে মাঝে গুনতাম। একদম কথা বলারআগে থেলেই স্মার্ট ফোন চালানো প্রজন্ম এই ভিউ কার্ডের আনন্দ থেকে বঞ্চিত। আমি একটা বার্লিন লেখা একটা চম্বুকযুক্তইস্টিলের শোপিস কিনলাম। ইউরো খরচ করতে হল। হোক। আমি নতুন কোন শহরে গেলে আমি এই জিনিশ কিনি, আরদেশে গেলে সে দেশের পতাকা। এখন ঝুলিতে আছে ১০ টা পতাকা।  একদিন এই পতাকার অংকের ঘরে পৌঁছাবে

সুভিনির দোকান থেকে বেরিয়ে পার্ক ধরে আবার কিছুক্ষন হাটলাম। এবার সামনে পড়লো আরেকটা সৌধ। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধেনাজিরা শুধু ইহুদি না, আফ্রিকানদেরও হত্যা করে। তাদের স্মরণে এই সৌধ। দুনিয়া অদ্ভুত, শুধু শক্তিমানদেরই মনে রাখে।হলোকাস্ট নিয়ে সবাই জানে কিন্তু আফ্রিকানদের কিংবা বাংলাদেশে ব্রিটিশদের চাপিয়ে দেওয়া দুর্ভিক্ষে হত্যা!? বলা হয় যদিমহাযুদ্ধে জার্মানি জিততো তাহলে হলোকাস্ট না দুনিয়া জানতো বাংলাদেশে ব্রিটিশদের চাপিয়ে দেওয়া দুর্ভিক্ষে নিহত ৫০ লক্ষমানুষের কথা। দুনিয়া আর কি জানবে, আমরা নিজেরাই ভুলে গেছি, ব্রিটিশ এবং জমিদারদের দুইশ বছরের লুটপাট, গনহত্যাআর অত্যাচারের স্ট্রিম রোলার। তবে সবই শেষ এটা আমি মনে করি না, একদিন এই ব্রিটিশ রয়েল পরিবার নামক গনহত্যাকারীপরিবারকেও কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।

হাটতে হাটতে অনেকটা ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি। এলব নদীর পাড়ে বসলাম। এই নদীর ব্যাস আমাদের দেশের ছোট নদী গুলোর থেকেএকটু বড়। আমার ইছামতি নদীর কথা মনে পরলো।  শান্ত কিন্তু বেশ গভীর তা পানির রং দেখেই বুঝতে পারছিলাম। নদীর প্রতিভালবাসা আমার রক্তেই প্রবহমান। মনটা প্রসন্ন হয়ে গেল। আমাদের দেশের নদীর সাথে ইউরোপের নদীর পার্থক্য হল এখানেশীতকালে পানি প্রচন্ড ঠান্ডা হয়, মাঝে মাঝে বরফ হয়ে যায়। ধরতে পারবেন না। আমাদের দেশে শীতকালে নদীর পানি যথেষ্টউষ্ণ থাকে। সম্ভবত এজন্য দানিয়ুব, রাইন, এলব দেখার পরেও মাইকেলের মন পরে ছিল কপোতাক্ষতে। দেখতে দেখতে রাতগভীর হয়ে এল। কিন্তু অনেক মানুষ। জার্মানির অল্প কয়েকটা শহরের মধ্যে বার্লিন একটা যে ঘুমায় না। কিন্তু আমার ঘুম পেয়েছেবেশ৷ উবান নিলাম। হেডফোনে ব্রায়ান এডামসের গান,   

And there ain’t no place that I’d rather be
And we can’t go back but you’re here with me
Yeah, the weather is really fine, up on cloud number nine

লেখক:মীর সালমান শামিল,জার্মান প্রবাসী।

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..